শিশুর ওপর শারীরিক, মানসিক, যৌন নির্যাতন ছাড়াও ধর্ষণ ও হত্যার মতো ঘটনা বাড়ছে। এর বেশির ভাগ ঘটনা ঘটছে রাস্তায়, নিজ বাসায় ও স্বজনের দ্বারা। ঘরকেই সর্বোচ্চ নিরাপদ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও অনেক নারী ও কন্যাশিশুর জন্য ঘরও অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ৮০৪ জন শিশুকে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন করা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ১০৯ শিশুকে। ১ ছেলে শিশুকে বলাৎকারের পর হত্যা করা হয়েছে। আত্মহত্যা করেছে ৪৫ শিশু। বিভিন্ন সময়ে মোট ৮৭ শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
গত সোমবার বেসরকারি সংস্থা আসক প্রকাশিত দেশের চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এমন চিত্র আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় খুবই উদ্বেগজনক। এটি শুধু গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য। এর বাইরে অনেক ঘটনা অগোচরে রয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার কন্যা শিশুর পরিপুষ্টতা ও লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য অবদান রাখলেও সহিংসতার হার হ্রাস পায়নি বরং উন্নত ও আধুনিক সমাজে আজো বাল্যবিয়ে, যৌন হয়রানি, যৌতুকের মতো বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
সংবাদ মাধ্যমের এক খবরে বলা হয়েছে, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের মামলায় সাজা হয় মাত্র ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ আসামির এবং বাকি ৯৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেকসুর খালাস পান। এতে বলা হয়েছে, ওই আইনের আওতায় ১ লাখ ৮০ হাজারের ওপর মামলা আদালতে বিচারের অপেক্ষায় আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, আর্থিক অসচ্ছলতা, অবহেলা ও পক্ষপাতিত্ব, বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, নিরাপত্তাহীনতাসহ বিভিন্ন কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বলা হয়ে থাকে, আইনের প্রয়োগ যথাযথ হলে এমন অপরাধ হ্রাস পেত। ভিকটিমরা দুর্বল বলে অপরাধীরা বিচার ও শাস্তি থেকে পার পেয়ে যায়। যে কোনো বয়সের নারী শিশুকে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে ধর্ষণ-সংক্রান্ত আইনটির কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ রোধে রাষ্ট্র যদি কঠোরতা না দেখায়, তবে সমাজে ক্ষতের গভীরতা বাড়তে থাকবে। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে।
অন্যদিকে ধর্মীয় মূল্যবোধ-সামাজিক নৈতিকতাও শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের মতো বিকৃতি থেকে মানুষকে নিবৃত্ত রাখতে পারছে না। এসব নিয়েও ভাবা দরকার। আমরা মনে করি, শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার মতো ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত বিচার করা, অভিযুক্ত ব্যক্তিকেই অভিযোগ প্রমাণের দায়, কন্যাশিশু নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রশ্রয় বন্ধ করা, শিশুদের জন্য আলাদা অধিদপ্তর এবং বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রশাসনের নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। সহিংসতা প্রতিরোধে বিদ্যমান হটলাইন গুলোর কার্যক্রম আরো জোরদার করা প্রয়োজন বলে মনে করছি।